মোঃ শরিফুল ইসলাম দাউদকান্দি (কুমিল্লা)
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের সাংগঠনিক ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে দাউদকান্দি উপজেলার একটি পৌরসভা এবং সকল ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে, বিশেষ করে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা নিয়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠছে এমন অভিযোগ, ইলিয়টগঞ্জ, বারপাড়া, বিটেশ্বর, দৌলতপুর, মারুকা ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে কিছু ব্যক্তি, যারা গত পনেরো বছর ধরে আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন এবং নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন, তারা বর্তমানে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা কিছু স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছেন।
বিএনপির উচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে কঠোর বার্তা এসেছে। লন্ডনে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা ব্যক্তিদের বিএনপির কাঠামোতে স্থান দেওয়া যাবে না। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. খন্দকার মারুফ হোসেন সম্প্রতি একাধিক সাংগঠনিক বৈঠকে এবং জনসমক্ষে বিষয়টি নিয়ে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, “বিএনপি জনগণের দল। যারা অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে দলের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, তাদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। যারা দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন না, বরং বিপরীত স্রোতে গেছেন, তারা এখন সুবিধা নিতে চাইলে সেটা দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রতি চরম অবিচার হবে।”
ড. মারুফ আরো বলেন, “কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির আগে প্রত্যেক সদস্যের রাজনৈতিক অতীত, ভূমিকা এবং দলের প্রতি আনুগত্যের মূল্যায়ন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। কে কখন কী ভূমিকা রেখেছেন, তা দলীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
এদিকে, দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করে যাওয়া তৃণমূল নেতাকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের বক্তব্য, আওয়ামী লীগের সাথীদের কমিটিতে জায়গা দেওয়া হলে দলের প্রতি দীর্ঘদিনের আনুগত্য ও ত্যাগের অবমূল্যায়ন হবে।
বিএনপির দাউদকান্দি উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “দলীয় নির্দেশনা অনুসারে আমরা সৎ, আদর্শবাদী এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়েই কমিটি গঠন করছি। তবুও কিছু বহিরাগত চক্র চাপ সৃষ্টি করছে, যা দুঃখজনক।”
এ প্রেক্ষাপটে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সতর্ক বার্তা এবং কঠোর মনোভাবই হতে পারে দলে শৃঙ্খলা ও আদর্শ রক্ষার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।