শেখ মামুনুর রশীদ মামুনঃ-
২৪ মে,শনিবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ফাজিলপুর এলাকায় এক বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় মর্মান্তিক ভাবে প্রাণ হারান সূচাউরা গ্রামের বাসিন্দা নিজামউদ্দিন (৫০) ও তার সহধর্মিণী (৪৩)। ঘটনা-স্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। তারা সমাজের অত্যন্ত পরিচিত, শ্রদ্ধাভাজন ও সহানুভূতিশীল এক দম্পতি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিলেন। তাদের রয়েছে একাধিক সন্তান, যাদের সামনে এখন নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ও শোকের ঘোর অন্ধকার।-একটি দুর্ঘটনা, নাকি কাঠামোগত অবহেলার নির্মম-ফলাফল?-দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে ছুটে আসা, প্রান কোম্পানির একটি ট্রাক হঠাৎ করেই তাদের ইজিবাইক-(অটোবাইক ) কে ধাক্কা দেয়। কোনো প্রকার সতর্কতা বা নিয়ন্ত্রণের চিহ্ন ছিল না চালকের মধ্যে। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করলেও, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তারা প্রাণ হারান। প্রশ্ন উঠেছে—এই চালকের বৈধ লাইসেন্স ছিল কি না? ট্রাকটির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন আপডেট ছিল কিনা? কোথায় ছিল স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগ? ব্যক্তিগত শোক নয়, রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার প্রশ্নঃ-নিহতের খালাতো ভাই, সাংবাদিক শেখ মামুনুর রশীদ মামুন এক আবেগাপ্লুত কিন্তু দৃঢ় বার্তায় বলেন,-“আমার ভাই ও ভাবির মৃত্যু কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়। এটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বহীনতার, তদারকির অভাবের এবং সড়ক নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নে দুর্বলতার নির্মম উদাহরণ। আমরা বিচার চাই, আমরা নিরাপদ সড়কের বাস্তবায়ন চাই। আর নয় প্রাণহানি। আর নয় দায় এড়ানো।”তিনি আরও বলেন,-এই দম্পতির একাধিক সন্তান রয়েছে। এখন কে নেবে তাদের দায়িত্ব? কে দেবে এই প্রাণের ক্ষতিপূরণ?”
আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ কোথায়?
বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বিদ্যমান থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ আজও বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক, পথচারী নিরাপত্তার অনুপস্থিতি, এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা মিলিয়ে সড়ক এখন এক ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
জাতীয় দায়িত্ব ও নৈতিক জবাবদিহি প্রয়োজন
রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত- ‘নিরাপদ সড়ক চাই’- কর্মসূচি যদি বাস্তবে কার্যকর না হয়, তাহলে তা শুধু লোক দেখানো স্লোগানই থেকে যাবে। এই মৃত্যু একটি পরিবারকে নিঃশেষ করলো, কিন্তু এটি গোটা রাষ্ট্রের জন্যও এক লজ্জাজনক ব্যর্থতা। আইনগতভাবে প্রয়োজন দ্রুত বিচার, ক্ষতিপূরণ, এবং দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন।-শেষ শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নঃ-নিজামউদ্দিন ও তার স্ত্রীর অকাল-মৃত্যুতে-এলাকায়-শোকের,ছায়া!-আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুরা বলছেন,-“তারা ছিলেন খুবই ভদ্র, শান্তিপ্রিয় মানুষ। এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।”-সবার একটাই প্রার্থনা—মহান আল্লাহ যেন তাদের জান্নাত-বাসী করেন, এবং পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন।-কিন্তু শুধু দোয়া নয়, চাই জবাবদিহি, চাই দায়িত্বশীল রাষ্ট্র।-আর একটিও প্রাণ যেন এমন ভাবে না ঝরে পড়ে—এই চেতনাতেই জেগে উঠুক জাতি।