বিশেষ সাক্ষাৎকারে বললেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের “ক” সার্কেলের ইন্সপেক্টর আমিনুল কবির। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: শেখ মামুনুর রশিদ মামুন–প্রশ্ন:মাদকের গডফাদারদের ধরতে কী উদ্যোগ নিয়েছেন আপনারা? আমিনুল কবির: ময়মনসিংহ জেলায় মাদকবিরোধী অভিযান এখন ধারাবাহিকভাবে চলছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে কয়েকজন বড় মাদক গডফাদারকে আমরা আইনের আওতায় এনেছি।–প্রশ্ন:একটু বিস্তারিত বলবেন—কোন কোন বড় মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়েছে? –আমিনুল কবির:অবশ্যই। আমি যোগদানের পরই ময়মনসিংহের অন্যতম বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী সুবর্ণা,তার স্বামী ও মা—এই তিনজনকে ৪,৮১৫ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া,কেওয়াটখালী বাজারের রেহেনা নামের এক নারী হেরোইনের বড় ব্যবসায়ী ছিল। তাকে ১৪০ গ্রাম ও ৩ গ্রাম হেরোইনের দুটি মামলায় আসামি করি। ওই এলাকায় সে হেরোইন ব্যবসার বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল—আমরা সেটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছি।–আরেকজন নিলোক্ষিয়া এলাকার নাজিমুদ্দিন,যাকে স্থানীয়রা ‘মাদকের গডফাদার’ বলে চিনে। তাকে ১,৭০০ ও ২,০০০ পিস ইয়াবাসহ দু’বার গ্রেপ্তার করে মামলা দিই।–নিরক্ষিয়া এলাকার সুরাইয়া আক্তার নামে এক নারী গডফাদারকেও ৪,৮০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া হাজী কাসেম আলী কলেজ মাঠের মাদক সম্রাজ্ঞী সুরমা—তার স্পট থেকে ৪ কেজি ৪০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে মামলা দেই। আর বিহারী কলোনির সাহিদা আক্তার, একজন পরিচিত মহিলা মাদক ব্যবসায়ী—তাকে ১,৮৮৫ পিস ইয়াবা ও ৩০০ পিস নেশার ইনজেকশনসহ ধরি। তার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।–প্রশ্ন: এত বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও—তারা আবার কীভাবে মুক্ত হয়ে আসে?
–আমিনুল কবির: এই জায়গাটিই আমাদের জন্য সবচেয়ে দুঃখের। আমরা প্রাণপণ পরিশ্রম করে বড় বড় গডফাদারদের ধরছি,মামলা করছি,কিন্তু তারা বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবারও পুরনো পেশায় ফিরে যাচ্ছে। ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করতে পারছি না। তবে আমরা হাল ছাড়িনি—প্রতিটি পুনরায় সক্রিয় ব্যবসায়ীকে নতুনভাবে নজরদারিতে রাখছি।
–প্রশ্ন:তাহলে মাদকের বিরুদ্ধে আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী? –আমিনুল কবির:আমাদের নীতি স্পষ্ট—জিরো টলারেন্স। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো আপস নেই। যত বড় –প্রভাবশালীই হোক না কেন,ধরা পড়লে ছাড় নেই। আমরা জনগণের সহযোগিতা চাই। জনগণ যদি তথ্য দেয়,আমরা সেই তথ্য যাচাই করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই।–প্রশ্ন: জনগণের প্রতি আপনার বার্তা কী হবে? –আমিনুল কবির: মাদক শুধু একজনকে নয়—পুরো পরিবার,সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করে। তাই আমরা চাই,মানুষ যেন সাহস করে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মুখ খোলে। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—যে কোনো তথ্য গোপন রাখা হবে। মাদক ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের ধরতে সবাই এগিয়ে আসুন।
শেষ কথা:ময়মনসিংহ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এখন মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তবে আইনি ফাঁকফোকর,রাজনৈতিক আশ্রয় ও জামিনের সংস্কৃতি ঠেকানো না গেলে মাদকের মরণগ্রাস থেকে সমাজকে মুক্ত করা কঠিন হবে।
তবুও,ইন্সপেক্টর আমিনুল কবিরের মতো কর্মকর্তা যদি দৃঢ়ভাবে লড়ে যান—তাহলে একদিন হয়তো ময়মনসিংহই হতে পারে ‘মাদকমুক্ত জেলা’র আদর্শ মডেল।

