মোঃআনজার শাহ
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ১৫ নম্বর পলগাছা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জসিম নারায়নপুর গ্রামে বহুদিনের জটিলতা ও অবহেলায় পড়ে থাকা হিন্দু শ্মশানটি অবশেষে নতুন প্রাণ ফিরে পেল। আর এই উদ্যোগের পেছনে আছেন বারুল গ্রামের সন্তান, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এলাকাজুড়ে পরিচিত মো: সামছুল আলম বুলন। তিনি নিজ অর্থায়নে শ্মশানটির মাটি ভরাটসহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু বছরের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন।
স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্মশানটি মাটি ধসে ও নিম্নচাপের কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। বিল্ডিং তোলা তো দূরের কথা, সৎকারের মতো জরুরি ধর্মীয় কার্যক্রমও অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হতো। বারবার অভিযোগ ও অনুরোধের পরও কেউ এগিয়ে না এলে মোঃ সামছুল আলম বুলন দায়িত্ব নেন নিজ হাতে এই সমস্যার সমাধানে।
তার পরিবার মুসলিম পরিবারের সম্মানিত সদস্য। পিতা মোহাম্মদ খোকন মিয়া, মাতা রসুমা বেগম, উভয়েই ভারুল গ্রামের পরিচিত ব্যক্তি। এমন পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি নিজের ধর্ম নয়, মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি কোনো প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই শ্মশান এলাকায় মাটি ভরাটের পুরো ব্যয়ভার গ্রহণ করেন।
শ্মশান ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য বিমল চন্দ্র কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলেন, আমাদের এই শ্মশান বহু বছর ধরে অপরিকল্পিত অবস্থায় পড়ে ছিল। মাটি ভরাট না থাকায় আমরা সঠিকভাবে স্থায়ী কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারছিলাম না। মোঃ সামছুল আলম বুলন নিজ উদ্যোগে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছেন। তার এই সহায়তা শুধু একটি স্থাপনা সংস্কার নয়, বরং আমাদের বিশ্বাস, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বড় ভিত্তি তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, ভগবান তার ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনে কল্যাণ করুন।
এলাকাবাসীর মতে, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে সম্প্রীতির নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। মাসুম আলম বুলনের কাজটি শুধু একটি শ্মশান সংস্কার নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
এই ঘটনাকে ঘিরে পুরো এলাকায় এক ধরনের ইতিবাচক আলোচনার জন্ম হয়েছে। সবাই বলছেন, সমাজ এগোয় তখনই, যখন মানুষ মানুষকে তার ধর্ম নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করে পাশে দাঁড়ায়। মাসুম আলম বুলন সেই বার্তাই আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন।

