নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা: কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পলাতক চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম মানিকের একটি গোপন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। ভিডিওটি শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, টেলিগ্রামে “কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ” নামে একটি গ্রুপে (মোট সদস্য ৩৫৭১ জন) ভিডিও কলে অংশ নিচ্ছেন মানিক।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তিনি আওয়ামী লীগকে পুনঃসংগঠিত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন এবং দলের মামলা খাওয়া নেতাকর্মীদের রেহাই দিতে মোটা অংকের বাজেট নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০১৩ সালের মতোই আবারও দাউদকান্দিকে আন্দোলনমুক্ত রাখার চেষ্টা ছিল তার। ১৬ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের সময় এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও, ৩০ জুলাই মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে উপজেলা মিলনায়তনের এক সভায় তৎকালীন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরের ছোট ভাই টুটুল তাকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেন, “দাউদকান্দিতে আন্দোলনের জন্য কেউ যেন রাস্তায় না নামতে পারে— যা করার দরকার তা-ই করো।”
৩ ও ৪ জুলাই সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায়ও মানিকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি তার এলাকায় ফিরে আসার নানা উদ্যোগ ও অপচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে তিনি পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনায় লিপ্ত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত অভিযোগ হলো, বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোসাঃ শাহনাজ বেগমকে সরাতে মানিকের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দুইটি হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলার অভিযোগ, তিনি গুলশানে আন্দোলনের সময় একজনকে হত্যা করেছেন এবং অপরটি তিতাস উপজেলার শোলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
প্রসঙ্গত, শাহনাজ বেগম দীর্ঘদিন বারপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাকে জোর করে আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে বিতর্কিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শাহনাজ বেগম জানান, “আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
স্থানীয়দের মতে, শাহনাজ বেগম অত্যন্ত বিনয়ী, মিশুক ও জনবান্ধব একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি টানা তিনবার ইউপি সদস্য হিসেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকাবাসীর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট উচ্চ।
এই ঘটনায় দাউদকান্দি জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।